
মে ২০২০, করোনায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বিশ্বের অনেক দেশেই কমে এলেও বাংলাদেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং দিন দিন এই সংক্রমণের হার বাড়ছেই। আরও বেশি বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন আগের চেয়েও বেশি মানুষ।স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ওই মাসের বাকি ২৩ দিন মিলিয়ে মোট শনাক্ত হয়েছিলেন ৫১ জন। তবে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে এপ্রিলে। ওই মাসে ৭ হাজার ৬১৬ জনের শরীরে সংক্রম শনাক্ত হয়েছিল। মে মাসে গিয়ে এক লাফে সংক্রমণের সংখ্যা হয়ে যায় ৩৯ হাজার ৪৮৬টি, যা ছিল আগের মাসের পাঁচ গুণেরও বেশি।
এদিকে, ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর পর ওই মাসে আরও চার জন মারা যান। এপ্রিল মাসে এই ভাইরাস কেড়ে নেয় ১৬৩ জনের প্রাণ। মে মাসে এই সংখ্যা এপ্রিলের তুলনায় প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়, মারা যান ৪৮২ জন।
ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ শনাক্তের হার :
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার দিন দিন বাড়ছেই। মার্চ মাসের তথ্য বাদ দিলে এপ্রিলে ৬২ হাজার ২০৬টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৬১৬টি। সে হিসাবে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ। মে মাসে দেখা গেছে, মোট ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৩৯ হাজার ৪৮৬টি। সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
স্বল্প সংখ্যক টেস্ট এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে টেস্টের উপর। অর্থাৎ যত বেশি টেস্ট করে যত দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করা যাবে ততই রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে।বাংলাদেশে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।৬ জুন প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্ট এর একটি প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক জন ক্লেমেনস দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই তখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭.৫ লাখের’ও বেশি ব্যক্তি
কম সংখ্যক পরীক্ষা করতে পারার কারণে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যানে যা বলা হয়েছে; করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় রোগটির বিস্তার মোটামুটি শ্লথ করতে পেরেছে এই দেশগুলো কিন্তু থামাতে পারেনি, যা লকডাউন প্রত্যাহারের পর আবারও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সংক্রমণের বর্তমান গতি অনুসারে প্রতি ২ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। তবে এসম্পর্কিত কিছু মডেলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এই অঞ্চলে সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে জুলাই মাসের শেষের দিকে এবং সে’সময় সরকারি পরিসংখ্যানেও আক্রান্ত ৫০ লাখ ও মৃত্যু ১.৫ লাখ পেরোতে পারে। [6 June ,The Economist]
নারায়ণগঞ্জের পৌর কবরস্থানে মে মাসে ৫৭৫ জনের দাফন করা হয়েছে, যা সাধারণত প্রতিমাসে ২৫০ এর’ও কম হত। তবে সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে যে, দাফনকৃত ৫৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ৭০ জন এই রোগে আক্রান্ত ছিল। প্রতিবেদনটিতে চট্টগ্রামে কবর খনন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে যে; খোঁড়ার কাজ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তিনি এবং তার সঙ্গীরা গত ৪ দিন ধরে ঘুমানোর সময় পাচ্ছেন না। [6 June ,The Economist]এছাড়াও, ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাভাইরাস রোগ সংক্রমিত শীর্ষ ১৭ দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। আক্রান্ত শনাক্তের ১০৩তম দিনে এটি ঘটেছে। ১০৩তম দিনে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ায়।
৯ জুন, ২০২০ পর্যন্ত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তালিকায় শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের (সিজিএস) গবেষণায় জানা গেছে যে, ৮ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত দেশে কোভিভ ১৯ রোগের ন্যায় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১,০১০ জন। গুজব, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ৮৫ জন এবং ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও এসম্পর্কিত নির্দেশনা লঙ্ঘনের অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪১৬ জন এছাড়াও জরিমানাকৃত হয়েছেন ৮,৫৩৩ জন। করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্কের ঘটনা ঘটেছে ১৩৯টি এবং বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে ৮৯ টি।[১৯ মে,প্রথম আলো]অনেক বিশেষজ্ঞ, প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় কম পরীক্ষা করাকেই, দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম পাওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচনা করছেন। ১৩ই জুন পর্যন্ত প্রতি দশ লাখে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে: বাংলাদেশে ৩,০৬৫ জন; পাকিস্তানে ৩,৯৩৬ জন; ভারতে ৪,১০২ জন; শ্রীলংকায় ৪,০১৫ জন এবং নেপাল ১০,৯০২ জন। [১৫ জুন , বার্তা২৪]
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা বাংলাদেশে করা হয়নি।সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর লক্ষণসহ অনেকসংখ্যক রোগীর মৃত্যুসংবাদ এসেছে যার মধ্যে কিছুসংখ্যক ভুয়া এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলে প্রমাণিত হয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় জেলা হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল তবে কয়েকজনকে চিকিৎসা দিতেও অস্বীকৃতি জানানো হয় যদিও যাচাই নিশ্চিত করতে কোনই পরীক্ষা করা হয়নি।[৩০মার্চ ,New Age] দীর্ঘ সময় যাবত পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে শুধুমাত্র রাজধানীর ‘আইইডিসিআর’ এ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল, যদিও কোভিড-১৯ এর লক্ষণসহ রোগীর খোঁজ সারাদেশেই পাওয়া গিয়েছিল।
করোনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা :
বাংলাদেশের জনগণের কোভিড-১৯ পরীক্ষা এবং সাধারণ রোগের রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বহুবিধ জটিলতা, অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। দেশের সব জেলাতেই সাধারণ রোগের চিকিৎসাসেবা নিতে অনেক রকমের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং ভোগান্তি, হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল, বলে জানা গেছে। সরকারি নির্দেশনা দেয়ার পরেও, দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল করোনা পরীক্ষার ফলাফল (কোভিড-১৯ নেগেটিভ ছাড়পত্র) না দেখে সাধারণ রোগী ভর্তি নেয় নি, বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র সরকারি ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’গুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া রোগী ভর্তি নিয়েছিল যা চাহিদার তুলনায় অনেক অপ্রতুল ছিল বলে গনমাধ্যমগুলো দাবী করেছিল। বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সাধারণ রোগী ও স্বজনদের বহু ব্যার্থ চেষ্টা এবং ফলাফলের অপেক্ষার সময়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছিল। আর, কোভিড-১৯ এর নমুনা দেয়া এবং ফলাফল পেতেও দীর্ঘসূত্রতায় ভুগতে হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা নিয়ে বরাবরই অভিযোগ থাকলেও, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই দেশটির স্বাস্থ্য অবস্থা যে কতটা নাজুক, সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে।একদিকে যেমন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালগুলো ঠিকভাবে সেবা দিতে পারছে না, অন্যদিকে অন্যান্য জটিলতার রোগীরাও চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোও।করোনাভাইরাস নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তারা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার চরম দুরবস্থার চিত্র বর্ণনা করেছেন।বাংলাদেশের জেলা বা উপজেলা শহরে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার অভিযোগ বেশ পুরনো। সেখানে ভালো চিকিৎসক থাকেন না, হাসপাতালগুলোয় সরঞ্জামাদির অভাবের অভিযোগ রয়েছে।কিন্তু এখন ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানের অভাব, আইসিইউ ও মেডিকেল সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততার নানা চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে যে হাজার হাজার বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই সংকটের সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রাখার অভিযোগও রয়েছে।সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, তাদেরকেও অনেক প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। মানসম্পন্ন মাস্ক ও পিপিই না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকেই। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক চিকিৎসক তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলাতে সরকার সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার সেবিকা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।আইসিইউ ও হাসপাতাল শয্যা বাড়ানোর কাজও শুরু হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসার বেহাল চিত্র খুব একটা পাল্টায়নি।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির বিচারে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বাংলাদেশ।কিন্তু সেই বরাদ্দও পুরোপুরি ব্যয়িত হয়না বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।২০১৯-২০২০ সালের চলতি বাজেটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থ মূল্যে যার পরিমাণ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।আগের বছর ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডে ব্যয় করা হয় জিডিপির ৯ শতাংশ।
ব্যাপক হারে বাড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা শনাক্তের সংখ্যা :
দেশে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী মিলে দুই হাজার ১১১জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। [২৭ মে,দৈনিক যুগান্তর ]বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) অধ্যাপক ডা. মো. শহিদ উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৭০৩ জন চিকিৎসক, ৫৬১ জন নার্স ও ৮৪৭ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন।এই চিকিৎসক আরও বলেন, রাজধানীতে মোটা দাগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১০০ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৯ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রথম থেকে চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নিলে এবং হাসপাতালগুলো উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
পুলিশের আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে :
করোনাযুদ্ধে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে পুলিশের ১৬ জন গর্বিত সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। মে মাসে সারা দেশে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার অতিক্রম করল। এর মধ্যে ডিএমপিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭০৬ জন। [২ জুন, দৈনিক প্রথম আলো]
আলোচনায় গণস্বাস্থ্যের আবিষ্কৃত কিট :
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা শনাক্ত করার কিট বানিয়েছে৷ সরকার তা নিতে, অনুমোদন দিতে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ৷ কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, সরকার দুষ্ট, তাই তার কিট নিচ্ছেন না৷ আর সরকার বলছে, কেন্দ্রের বানানো কিট বৈজ্ঞানিক প্রটোকল মানেনি৷ সরকারবিরোধীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, বলছেন, সরকারের এটি রাজনৈতিক অপকৌশল, কারণ, এই সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি৷ [২৭ এপ্রিল , ডয়চে ভেলে]
করোনায় বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি :
মে ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে দেশের অর্থনীতির সূচকসমূহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ৭৮,৩০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ফেলেছে যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে ১ বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ। একারনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভ মানি (আরএম)/ হাই-পাওয়ার্ড মানি বাজারে সরবরাহ করতে হচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে ছাপানো টাকা।
এপ্রিল মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশের রপ্তানি আয় কমেছে ৮৩%। এপ্রিল মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫২ কোটি মার্কিন ডলার যা গতবছর একই সময়ে হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার; যা প্রকৃতপক্ষে ৮২.৮৬% কমেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২,৯৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩% কমেছে।
আমদানি, ঋণপত্র খোলা বা নিষ্পত্তি অনেক পরিমাণে কমেছে যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। এপ্রিল মাসে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলারের যা গতবছর একইসময়ে খোলা হয়েছিলো ৫২৬ কোটি মার্কিন ডলারের; যা প্রকৃতপক্ষে কমেছে ২৬৮%। এপ্রিল মাসে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলারের যা গতবছর একইসময়ে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৫০৮ কোটি মার্কিন ডলারের; যা প্রকৃতপক্ষে কমেছে ৬২%।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বিদেশি আয়ের (রেমিট্যান্স) হার কমে আসছে এবং অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন তা আরও কমে যাবে। এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যা গতবছর একই সময়ে এসেছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার; যা প্রকৃতপক্ষে কমেছে ২৪.২৬%।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে (গার্মেন্টস) ক্রয়আদেশ (অর্ডার) অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশর পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং ‘বিকেএমইএর’ তথ্যানুসারে, করোনা সঙ্কটের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। শুধুমাত্র বিজিএমইএ’রই ১,১৫০টি কারখানার ২২,৮০,০০০ জন শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদিও এপ্রিল মাস থেকে দেশের পোশাক কারখানায় পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। ক্রয়াদেশ এবং দ্রুত কাজের গতি বাড়লে তা দেশের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ সর্বোচ্চ পরিমাণে কমেছে যা রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব কে চিঠিতে জানিয়েছেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবছরই রাজস্ব আয় বেড়েছে তবে চলমান অর্থবছরে তা কমবে এবং রাজস্ব বোর্ডের চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে না, বলা হয়েছে। গত অর্থবছরে ২,৩৪,৬৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়েছিল যা চলমান অর্থবছর শেষে অনুমিত হিসাবে হতে পারে ২,২০,০০০ কোটি টাকা। আদায় এর পরিমাণ, রাজস্ব বোর্ডের চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১,০৫,৬০০ কোটি এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৮০,৫০০ কোটি টাকা কমবে।
চাকরি হারানো, বেতন না পাওয়া ইত্যাদি বহুবিধ কারনে ব্যাংকে জমানো সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের ব্যক্তিদেরকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার পরিমাণ অনেক কমেছে আবার একইভাবে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা। গত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি পরিমানে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির কারণে ভাঙানো হয়েছে।
ঋণ নিচ্ছেন না বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। এছাড়াও ব্যাংকে রাখা নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন অনেকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণ অনেক কমে গেছে।[২৯ মে, বাংলা ট্রাইব্যুন]
করোনা মহামারী সঙ্কটে বাংলাদেশে প্রতি ৬ যুবকের ১ জন কর্মহীন হয়ে পড়েছে এবং যাদের কাজ রয়েছে তাদের ২৩ শতাংশের কর্মঘণ্টা কমে এসেছে৷ ২৭শে মে প্রকাশিত, ‘আইএলও মনিটর : কোভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ এর চতুর্থ সংস্করণে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই দাবি করেছে। শ্রমবাজারের উপর করোনা মহামারীর প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত আইএলও এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪ ভাগের ১ ভাগের বেশি (২৭.৩৯%) যুবক বেকার রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বেকারত্ব বাড়ছে এবং এতে যুবক ও নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই সঙ্কটে যুবকরা ৩ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একদিকে তারা কাজ হারাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে আবার একইসাথে চাকরিতে প্রবেশ ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটছে।[৩০ মে ,বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর]
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সোয়া ৩ কোটির বেশি৷ এর বাইরে গত দেড় যুগে ২.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন৷ উপার্জন না থাকলে দ্রুতই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন৷ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে করোনার প্রভাবে দেশের নিম্নবিত্তের আয় ৭৫% কমে গেছে, হতদরিদ্র বা যাদের দৈনিক আয় ১৬০ টাকার কম এমন মানুষের সংখ্যা ৬০% বেড়ে গেছে৷[৩০ মে, ডয়চে ভেলে]
করোনায় তৈরি পোষাক শিল্পে প্রভাব :
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তৈরি পোষাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুসারে তৈরি পোষাক খাতে ৪ হাজারেরও বেশি পোশাক কারখানায় প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত আছে।করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য খাতের মত হুমকির মুখে দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই খাত। ইতিমধ্যে দেশের লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন। ফলে অধিকাংশ কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার ঘোষণা করেছে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ। এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ নিয়ে অনেক পোশাক কারখানা মালিক তাদের কর্মচারীদের বেতন দিয়েছেন। অনেকে বলছে যে এই প্যাকেজ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অনেকেই দিতে পারছেনা বেতন ভাতা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে কিছু কারখানা খুলে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়। করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক প্রভাবে সকল দেশেই কমতে থাকে তৈরি পোশাকের চাহিদা। যার ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে শুরু করে। বিজিএমইএ বলছে, এরই মধ্যে অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।[প্রথম আলো] বিবিসি বাংলা “করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প টিকে থাকতে পারবে?” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে করে। প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার যত বাড়ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগও ততটাই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে এরই মধ্যে সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এই শিল্প টিকে আছে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের উপর নীর্ভর করে। কিন্তু সেসব দেশে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে বহু পশ্চিমা ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন।২১ মে ২০২০ প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয় করোনার প্রভাবে বন্ধ দেশের ৪১৯ পোশাক কারখানা।বিশ্লেষকরা বলছে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গভীর সঙ্কটে পরবে তৈরি পোশাক শিল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ “অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব: আমাদের করণীয়” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ‘বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প আরো বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রয়োজন’।বিবিসি বাংলার অন্য একটি প্রতিবেদনে ‘ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে করণীয় পদক্ষেপসমূহ’ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে মোটা দাগে কিছু সম্ভব্য পদক্ষেপের কথা বলা হয়। সেগুলো হচ্ছে ক্রেতাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ ও ক্রয় আদেশ পুনর্বহাল করা, দেনা পরিশোধ, দেউলিয়া হওয়া ঠেকানো, উৎপাদন মৌসুম নষ্ট হতে না দেয়া, লকডাউন উঠে গেলে করণীয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, চীন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হওয়ার কারণে ক্রেতারা পণ্য উৎপাদন অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে চান, ফলে এটি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা।সার্বিক বিবেচনায় এটা প্রতীয়মান যে, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প এক গভীর সঙ্কটের দিকেই যাচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তাই সরকার, শিল্প মালিক, শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সবারই এগিয়ে এসে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ছাঁটাই বন্ধ,বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ :
করোনা মহামারিতে শিল্পকারখানার মালিকরা যখন ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছিলেন তখন শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র বিক্ষোভ । এছাড়াও কয়েক মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে ।দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিক্ষোভের সংবাদ নীচে দেওয়া হল :
১. গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় অনন্ত ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড নামের একটি কারখানায় ছাঁটাইয়ের ‘খবরে’ শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। আজ শনিবার সকাল থেকে উত্তেজিত শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। (২ মে ২০২০)২. আশুলিয়ায় কারখানায় ঢুকতে না পেরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ । (২ মে ২০২০)৩. কর্ণফুলীতে বেতনের দাবিতে কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ ।( ২ মে ২০২০)৪. বকেয়া বেতনের দাবিতে ধামরাইয়ে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। (৩ মে ২০২০)৫. ঢাকার আশুলিয়ার চাকরিতে পুনর্বহাল ও বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ (৪ মে ২০২০) ৬. গাজীপুরে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ( ৬ মে ২০২০ ) ৭. আশুলিয়া ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ,ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ (৯ মে ২০২০) ৮. সীতাকুণ্ডে সুতা কারখানায় বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ (১০ মে ২০২০)৯ . বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের আন্দোলন (১১ মে ২০২০) ১০. সাভারে শতভাগ ঈদ বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ । (১৮ মে ২০২০) ১১. পূর্ণ ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের অবরোধ ।(২০ মে ২০২০) ১২. গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ (২১ মে ২০২০)
বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের মানবেতর জীবযযাপন :
করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আয়ের কোনো উৎস নেই দেশে ফেরা ৮৭ শতাংশ প্রবাসীর। দেশে ফিরে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি ৯১ শতাংশ প্রবাসী। জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ৫২ শতাংশ প্রবাসীর।‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। ( ২২ মে ২০২০,প্রথম আলো )
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড :
লিবিয়ার মিজদা শহরে সেখানকার অপহরণকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ২৬ বাংলাদেশি ও ৪ সুদানিকে হত্যা করে। আহত করে অন্য ১১ বাংলাদেশিকে। ঘটনাস্থলে থাকা ৩৮ বাংলাদেশির মধ্যে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সাইদুল নামের একজন। বাংলাদেশিসহ ওই অভিবাসীদের লিবিয়ার মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রেখেছিল মানব পাচারকারী চক্র। এ নিয়ে একপর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মারামারি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানব পাচারকারী নিহত হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে সেই মানব পাচারকারীর লোকজন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
প্রবাসী কর্মীদের তাড়াতে মরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের আট দেশ :
করোনার অর্থনৈতিক ধাক্কায় আরব দেশগুলো বৈধ অভিবাসী কর্মীদের ছাঁটাই করে ফেরত পাঠাতে চাইছে। অবৈধ কর্মীদের পাঠিয়ে দিচ্ছে। লাখো মানুষ ফিরলে সঙ্গনিরোধের ঝক্কির সমান বড় হয়ে আসবে তাঁদের জীবিকা ও প্রবাসী আয়ের সংকট। কিন্তু সরকারের প্রস্তাব, দেনদরবারে দেশগুলো টলছে না।
এপ্রিলের শুরু থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ বেকার কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাঁচ–সাত লাখ কর্মী ফেরার আশঙ্কা করছেন। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়াতে পারে।
সরকারের জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, অভিবাসী কর্মীদের প্রায় ৮০ ভাগই আছেন মধ্যপ্রাচ্যের আট দেশে। প্রবাসী আয়ের অর্ধেকের বেশি তাঁরাই পাঠান। কর্মী বেশি ফিরতে পারে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও ওমান থেকে। এই পাঁচ দেশ বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি প্রবাসী আয়ের দেশের মধ্যে পড়ে। বাহরাইন, লেবানন আর জর্ডান থেকেও অনেক কর্মীকে ফিরতে হবে। জর্ডানে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করেন। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় কারখানায় কাজ বন্ধ, বেতন পাচ্ছেন না অনেকে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্যের তেলনির্ভর অর্থনীতি গত ৪০ বছরে সবচেয়ে বড় ধাক্কার মুখে পড়ছে। আর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) আরব দেশগুলোতে ৫০ লাখ লোক চাকরি হারাতে পারে।[প্রথম আলো]
প্রবাসী আয় বিপন্নতর :
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাবে (বিএমইটি), গত দুই বছর অভিবাসন কমছে। ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ১০ লাখ কর্মী। কমতে কমতে গত বছর সংখ্যাটা সাত লাখে ঠেকেছে। এ বছর ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিমান চলাচল ছিল। দেড় লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছেন। কিন্তু বিশ্বজোড়া লকডাউন শেষ হলেও কর্মী নেওয়ার হার অনেক কমতে পারে।বেসরকারি খাতে বিদেশে কর্মী পাঠানো এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, করোনাবিধ্বস্ত প্রতিটি দেশ নিজের অর্থনীতি আর কর্মীদের বাঁচাতে অভিবাসী কর্মী কমাবে। চুক্তি নবায়ন করবে না। বেকারদের দেশে ফিরতে বাধ্য করবে।তিন বছর ধরে প্রবাসী আয় বাড়ছিল। করোনাকালেও প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। তবে ২০১৯ সালের এপ্রিলের তুলনায় গত এপ্রিলে এটা ১১ শতাংশ কমে গেছে।
করোনায় বর্তমান কর্মসংস্থানের অবস্থা :
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি এনজিওর জরিপে উঠে এসেছে যে, দেশে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের আয়-রোজগারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে জরিপে অংশ নেয়া মানুষের গড় আয় ছিল ১৪,৫৯৯ টাকা। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯৩ শতাংশের আয় কমে গেছে। পরের মাসে অর্থাৎ মার্চে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ টাকা। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট বিভাগের মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। সরকারি ছুটি এবং অবরোধের কারণে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন অথবা তাদের কাজ কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ আছে কিন্তু তারা বেতন পাচ্ছেন না। শহর ও গ্রাম এলাকার মোট ২ হাজার ৬৭৫জন মানুষ এই জরিপে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী তাদের সংগঠনের রেজিস্টার্ড ৫০ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরও ২০ লাখ শ্রমিক। যাদের জীবন প্রতিদিনের রোজগারের ওপর চলে। লকডাউনের ফলে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা নিদারুণ আর্থিক কষ্টে পড়েছেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে নিয়মিত চাকরিজীবী বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দিনযাপন রীতিমতো কষ্টকর হয়ে পড়েছে পরিবহনশ্রমিক, গার্মেন্টসকর্মী, বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িতদের। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীদেরও তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বেতন দেয়া হয়নি অথবা চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে তারা দিনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সহায়তার প্রয়োজন থাকলেও লোকলজ্জার কারণে তারা সাহায্য চাইতে পারছেন না অথবা একাধিকবার সহায়তা চেয়েও পাননি। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন। তাদের পক্ষে বাসাভাড়া দেয়া, সংসারের জন্য বাজার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
করোনায় কৃষকদের করুণ অবস্থা :
বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, এখনও বাংলাদেশের ৮৭ % গ্রামীণ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ পরিবার কৃষি ও অকৃষিজ উভয় ধরনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল এমনকি শহরে বসবাসকারীদের মধ্যেও ১১ শতাংশ মানুষ সরাসরি কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপের হিসাবমতে, বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫.৭ শতাংশই কৃষিতে নিয়োজিত।( ২২এপ্রিল,সমকাল )।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এ খাতের সাথে জড়িত কৃষকরা লোকসান গুনছেন। কারণ সরকার ধানের যে সংগ্রহমূল্য ঠিক করে দিয়েছে তার অর্ধেক মূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে। ফলে ধানের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এ অবস্থায় ব্যাংক ঋণ, সংসার খরচ— সবকিছু মিলিয়ে কৃষকরা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতের সাথে জড়িত এসব কৃষক যদি ন্যায্যমূল্য না পান তারা ভবিষ্যতে নিজেদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সরকার। এ তহবিল থেকে কৃষকদের মাত্র ৫ শতাংশ সুদে অর্থ প্রদানের কথা জানানো হয়েছে। এ তহবিলের অর্থ গ্রামাঞ্চলের পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি মশলা জাতীয় পণ্যের জন্য ৪ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা :
সব শিক্ষাঙ্গন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এর আগেই তথা ১৭ মার্চ থেকে। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমযান। ফলে রোজার ঈদ পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিকের। অপরদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ এপ্রিল বলেছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে, যখন করোনার প্রকোপ থাকবে না, তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই মাউশি থেকে মার্চ ও এপ্রিলের বেতন, টিউশন ফি বা অন্যান্য যে কোনও পাওনা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই বন্ধের মধ্যেই অভিভাবকদের ক্ষুদে বার্তায় বেতন পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বেশিরভাগ অভিভাবক। কারণ, উপার্জন বন্ধ থাকায় তারা চরম সংকটে রয়েছে। লকডাউনের কারণে প্রাইভেট এবং কোচিং বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ নেই তেমন। কারণ, করোনা আতংকে সকলেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অসংখ্য শিক্ষার্থী টিউশনি, কোচিং, পার্ট টাইম জব করে শিক্ষার ব্যয় বহন করতো। লকডাউনের কারণে এসব বন্ধ থাকায় তারাও বিপদে পড়েছে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার কথা ছিল চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। করোনার কারণে তা আটকে গেছে। ফলে ২০ লাখ শিক্ষার্থী চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ, ফল প্রকাশ যত দেরি হবে, কলেজে ভর্তি হওয়া তত বিলম্বিত হবে। একই অবস্থা হয়েছে এইচএসসির পরীক্ষার্থীদের। গত এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা শেষ হওয়ার ২০ দিন পর পরীক্ষা শুরু করা হবে। ফলে এই পরীক্ষার ১২ লাখ শিক্ষার্থী চরম বিপাকে পড়েছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে চতুর্থ দফায় মাইগ্রেশন ও অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তির সময় ছিল গত ৫-২১ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। এভাবে বহু পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। সেশনজটও সৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য, শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় ব্যতিক্রম হিসাবে সংসদ টিভিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কিছু পাঠদান হচ্ছে। কিন্তু এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ তেমন নয় বলে মিডিয়ার খবরে প্রকাশ। চলমান মহামারী সঙ্কট বাংলাদেশে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে যে, বাংলাদেশে কেবল ৩৪ % পরিবারের কাছে স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪ % পরিবারের টেলিভিশন দেখার সুযোগ রয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে বহুসংখ্যক শিশু ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।অন্যদিকে, অনলাইনে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ-সামর্থ্য সকলের নেই। গত ২৬ এপ্রিল ইউজিসি জানিয়েছে, বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৬০-৭০%। অপরদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে এনটিআরসিএ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৫-১৬ মে এবং লিখিত পরীক্ষা ৭-৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে ১১.৭২ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছে। এভাবে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারী করতে পারছে না। ফলে চাকরি প্রার্থীরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার- লাগামহীন মামলা ও গ্রেফতার :
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মার্চ থেকে ১০মে পর্যন্ত ৭১ দিনে এই আইনে মামলা হয়েছে ৪৩টি। এর আগে ২০১৯ সালে বছরজুড়ে এই সংখ্যা ছিল ৬৩।করোনাকালে দায়ের হওয়া মামলায় পেশাজীবী হিসেবে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে সাংবাদিক। এ সংখ্যা ১২ জন। মামলাগুলোর অধিকাংশই করেছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ও পুলিশ।ফটোসাংবাদিক শফিকুল গত ১০ মার্চ রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। যশোরে ভারত সীমান্তের কাছে বেনাপোল থেকে রহস্যজনকভাবে তিনি উদ্ধার হন গত ৩ মে। এরপর তাকে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় আদালত তাঁকে জামিন দিলেও পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।শফিকুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলা রয়েছে। তার একটিতে গত ২০ মে শফিকুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন তিনি রয়েছেন যশোর কারাগারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওএইচসিএইচআর বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে বলেছেন, সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের ওপর চলমান নির্যাতন এবং তাঁকে গুম করে রাখার বিষয়ে তাঁরা শঙ্কিত। তাঁরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শফিকুলের আটকাদেশ এবং তাঁর বিরুদ্ধে চলা ফৌজদারি মামলা ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে।জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে র্যাব-৩ গত ৫ মে প্রবাসী সাংবাদিক, কার্টুনিস্টসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা করেছে।এই মামলায় আসামি করা হয়েছে, কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নান, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে।(৬ মে ২০২০,প্রথম আলো)।
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি :
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম অভিযোগটি একেবারেই নতুন নয়। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ত্রাণ বিতরণ নিয়েও। ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩৭০টি স্বল্প ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে ওএমএস কার্ড দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে ডিলারদের মাধ্যমে ওএমএস কার্ডের পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডের কার্ডধারী ১৫০ জন পণ্য কেনেননি। কারণ ওএমএস কার্ডধারী ওই লোকেরা সবাই বিত্তবান। তাঁরা কেউ ১০ টাকা দামের চাল নিতে আগ্রহী নন। তবু রাজনৈতিক প্রভাব ও কাউন্সিলরের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাঁদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডের ত্রাণ বিতরণের যে চিত্র ১৫ মে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে, তা রীতিমতো হতাশাজনক। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, করোনা-দুর্যোগের এ সময় সরকারি ত্রাণের তালিকায় স্থান পাচ্ছে না অসহায়-অসচ্ছলরা। তালিকায় উঠছে বিত্তবান, বাড়ির মালিক, রাজনৈতিক নেতা ও কাউন্সিলরের আত্মীয়-স্বজনের নাম। অসচ্ছল লোকজনকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য তালিকা করার কথা বলে বারবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নেওয়া হয়; কিন্তু ত্রাণ পায়নি তারা। ত্রাণের জন্য কাউন্সিলরের কাছে গেলে বের করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তালিকায় উঠা স্বচ্ছল বাড়ি মালিকের নাম এবং বাড়ির ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু ওই ওয়ার্ডই নয়, এমন চিত্র ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ত্রাণ নিয়ে যে অরাজকতা চলছে তার প্রমাণ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেকটি খবর। খবরে বলা হচ্ছে, করোনার সময় ত্রাণ সহায়তা চেয়ে এবং ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির খবর জানিয়ে ফোন করছেন নাগরিকরা। গত ২১ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত সংরক্ষিত তথ্যে দেখা গেছে, এ সময়ে ত্রাণ চেয়ে কল করেছেন আট হাজার ২০৮ জন। ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির তথ্য দিয়ে ফোন করেছেন ১৭৫ জন।
এদিকে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগে মোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করল সরকার। এঁদের মধ্যে ২৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৪৫ জন ইউপি সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য এবং দুজন পৌর কাউন্সিলর রয়েছেন। [২৮ মে,দৈনিক প্রথম আলো ]
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আলোচিত সিকদারের দুই ছেলের দেশত্যাগ :
এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদার রোগী সেজে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। নিজেদের মালিকানাধীন আরঅ্যান্ডআর এভিয়েশনের একটি উড়োজাহাজকে ‘রোগীবাহী’ হিসেবে দেখিয়ে ২৫ মে দুপুরে তাঁরা ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অনুমোদন নিয়েই দেশ ছেড়েছেন হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি দুই ভাই।মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশ ছাড়ার আগে পুলিশও দুই ভাইকে ধরার কোনো চেষ্টা করেনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা না থাকায় পুলিশ প্রাথমিক কিছু তদন্ত পরিচালনা ছাড়া আর কিছু করেনি। সূত্র আরও জানায়, হত্যাচেষ্টার ঘটনা ৭ মে হলেও মামলা হয়েছে ১৯ মে। এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতাও মামলা না করা এবং মামলা হওয়ার পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত না করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে তদবির করেছেন। ( ৩০ মে,প্রথম আলো )
করোনায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা :
করোনাকালে দেশে ৬৫ শতাংশ পরিবারে নারী ও শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ঘরে আটকে পড়া, কাজ না থাকা, আয় কমে যাওয়া, খাবারের সংকট, ঋণের চাপসহ নানা কারণে পরিবারে বাড়ছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। ফলে বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতন। এর বেশিরভাগই ঘটছে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস্) এবং দেশের ১৮টি জেলার বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত জাতীয় প্ল্যাটফরম বা ফোরাম জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্সের (গ্যাড অ্যালায়েন্স) এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এই পর্যবেক্ষণভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে প্রায় সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই অনেক পরিবারে নারীদের অর্জিত সঞ্চয় দিয়ে পরিবারিক নিয়মিত খরচ চালানোর চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে নারীরা বাধা দিলে তার ওপর নেমে আসছে নানা রকমের নির্যাতন। বাধ্য হয়ে নারীদের তিল তিল শ্রমে এবং মেধায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট উদ্যোগ ও ব্যবসার পুঁজি এখন পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে খরচ করতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের আগামীদিনের চলার পথ আরও সংকটময় হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট নারীরা।স্টেপস ও গ্যাড অ্যালায়েন্স গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত দেশের ১৮ জেলায় ৭ হাজার পরিবারের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালায়। তাতে দেখা যায়, ৪ হাজার ৫৫০টি পরিবারে নারী ও শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই হিসাবে ৬৫ শতাংশ পরিবারেই নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে অভাবের কারণে নারী ও শিশুদের মারধর, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, খেতে না দেওয়া, ঘরে আটকে রাখা, জোর করে ত্রাণ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার ও তালাকসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবারের প্রয়োজনে কিংবা স্বামীর চাপে নারীদের সর্বশেষ জমানো টাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাপের বাড়ি থেকে টাকা বা খাবার আনার জন্য নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গভধারণ ও গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটছে। এসব নির্যাতনের বেশিরভাগই ঘটছে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে।
করোনা মহামারিতে মানবিকতা :
এত সব অঘটন–হতাশার মধ্যেও করোনাকালে সাধারণ মানুষ অন্যের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। শেরপুরের নাজিমউদ্দিন ভিক্ষুক হয়েও তাঁর সঞ্চিত ১০ হাজার টাকা করোনায় আক্রান্তদের সহায়তায় দান করেছেন। ভৈরবের তরুণেরা গরিব ও দুস্থ মানুষের জন্য তৈরি করেছেন ‘আহার ঘর’, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ মানুষের খাবার বিতরণ করা হয়। আরও অনেক স্থানে তরুণদের উদ্যোগে ‘আহার ঘর’, ‘বাজার ঘর’ ইত্যাদি গড়ে উঠেছে।
বিদ্যানন্দ নামের সংগঠনটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। কয়েকজন উদ্যমী তরুণের গড়া এই প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। অনেকে তাদের মাধ্যমে দুর্গত মানুষকে সহায়তা করছেন। করোনো সংকটের আগেও তারা গরিবদের মধ্যে ১ টাকায় খাবার বিলাত। পত্রিকায় এসেছে, দিনাজপুরের একটি শিশু তার মাটির ব্যাংক ভেঙে গরিব মানুষকে সাহায্য করেছে।এছাড়াও সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসা সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার ব্যানারেও চলে প্রতিদিন ব্যাপক ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ ।
অনেক কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিতর্কিত। কিন্তু করোনাকালে এই যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনেক মানুষ নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের নিয়মিত ত্রাণসামগ্রী দিচ্ছেন। অনেক নিজের নাম–ঠিকানাও প্রকাশ করছেন না।
স্বর্ণকিশোরী ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন বেশ কিছু এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক সমিতি নামে আরেকটি সংগঠন আশুলিয়া, টঙ্গী, সাভার, গাজীপুর এলাকার কয়েক শ অতি দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থসহায়তা করেছে। এ পর্যন্ত তারা আটটি উপকমিটি করে কাজ করছে। এ রকম আরও বহু প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তি বিপন্ন মানুষকে সহায়তা করছে। এসব জন–উদ্যোগ আশা জাগায়।
স্বল্প সংখ্যক করোনা টেস্ট,করোনার উপসর্গ নিয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, বিপর্যস্ত অর্থনীতি, ত্রাণ বিতরণে সীমাহীন দুর্নীতি,ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ইত্যাদি বিষয় নিয়েই ভয়াবহ মে মাস পার করেছে বাংলাদেশের নাগরিক ।